মো: সজিব আহমেদ: দীর্ঘ ১৯ দিন রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, আন্দোলন, প্রতিবাদের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ যে নতুন স্বাধীনতা অর্জন করছে তার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল জেনাশেন জেড এর। এই প্রজন্মটি ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বড় হয়েছে। এই প্রজন্মটি ছোট বেলা থেকে গোয়েন্দা বই পড়ে পড়ে বড় হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে এদের বুদ্ধিমত্তা, চিন্তাধারা অনেক তীক্ষ্ণ।
যারা সমাজগঠনে ভূমিকা রাখতে পারে, তেমনি সমাজের অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে রাষ্ট্র সংস্কার করতে পারে। যার সাক্ষী বাংলাদেশ গত ৫ আগস্ট হয়েছে। গত জুলাই মাসের কোটা সংস্কার আন্দোলন যে রাষ্ট্র সংস্কারণ আন্দোলনের রূপ নেবে, তা কখনো এই জাতি কাল্পনিক চিন্তার জগতেও হয়তো ভাবতে পারেনি।
একটি রাষ্ট্রযন্ত্র যখন মানুষের বাকস্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তখন সেই জাতির মধ্যে থেকে আলোক বর্তনীর মতো কিছু জনতা বের হয়ে আসে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশে ছাত্র সমাজ নিজের চাকরিতে কোটার এক অসুভ ছায়ার অনুভর করে। যার জন্য গত জুলাই মাসে কোটা সংস্করণ আন্দোলন সংগঠিত হয়।
এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের জন্য দিতে হয়েছে শত শত ছাত্রছাত্রীর তাজা প্রাণ। ফলশ্রুতিতে ছাত্রসমাজ কোটা আন্দোলন থেকে রাষ্ট্র সংস্করণ আন্দোলন রূপ রেখা আনায়ন করে। এরপর স্বৈরশাসক নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এক গণহত্যা চালায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উপর।
যার ফলশ্রুতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (বর্তমানে পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। ৪৫ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য দেন।
এত শহীদের রক্তের আত্মত্যাগ ছাত্রসমাজ বৃথা হতে দেয়নি। তারা শেষ পর্যায় ‘দফা এক দাবি এক’ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বৈরশাসকের পতন ঘটায়। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো পায় একটি নতুন স্বাধীনতা।
তাই কবি বলেছে-
‘স্বাধীনতা তুমি বিজয়ের মালা;
রক্তে ফোটা কুড়ি,
ত্যাগের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা;
রক্ত স্নাত নুড়ি।’
এখন একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন হলে সে দেশের কাজ সমাপ্ত হয় না বরং দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা তাদের সম্মুখ একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। যে জেনারশন জেড’র মাধ্যমে ১৯ দিনের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন একটি স্বাধীনতা চেতনার দেশ পেল তা আসলে কি চায়?
এটি একটি মুখ্যবিষয় এই দেশের আগামী উন্নয়নের জন্য। অতীতে ভয়াল রাজনৈতিক কালো ছায়া এই দেশের ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষের মনে তৈরি করেছে ভয়, হিংসা, বিভেদ। তাই বর্তমানে জেনারেশন জেড এর মধ্য হতে বের হয়ে এক অন্য জনবান্ধব বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা করে।
এর জন্য গত ৬ আগস্ট হতে এদেশের জাতি আরেকটি অপরূপ বাংলাদশের সুবাস দেখতে পেল। যেখানে এই তরুণ ছাত্র সমাজ দেশের জাতীয় সংসদ পরিষ্কার, গণভবনসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি অবকাঠামতে পরিষ্কার, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। বাজার মনিটরিংসহ রাস্তার পাশের দেয়ালগুলোতে আগামীর বাংলাদেশের প্রতিলিপি কেমন হবে তা ফুটিয়ে তুলছে।
জেনারেশন জেড নতুন বাংলাদেশকে নিয়ে কি প্রত্যাশা করছে তা নিম্নে দেয়া হলো-
১) একটি নতুন জনবান্ধব দেশ।
২) বাকস্বাধীনতা।
৩) দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন
৪) নতুন তারুণ্য রাজনৈতিক দল।
৫) রাজনৈতিক বায়ুমুক্ত ক্যাম্পাস
৬) সিন্ডিকেট মুক্ত বাজার ও বাণিজ্য সংস্থা।
আশা করি, ২০২৪ যে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যামে ছাত্রসমাজ এক নতুন বাংলার সূর্য ছিনিয়ে এনেছে, তা জাতি স্বর্ণ অক্ষরে স্মরণ রাখবে চিরকাল। আর এই স্বাধীনতার জন্য যারা তাদের প্রাণ ত্যাগ করেছে, তাদের জাতি জাতীয় বীর হিসেবে আগামী বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের জন্য হবে অনুপ্রেরণা। তাই বাংলার জেনারেশন জেডকে স্বাধীনতা রক্ষায় থাকতে হবে সর্বদা সজাগ। যাতে এই বাংলায় আর কোনো স্বৈরাচারের মসনদ তৈরি না হয়।
লেখক : মো: সজিব আহমেদ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, বিবিএ পয়েন্ট।