চট্টগ্রাম : রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সদর দপ্তর সিআরবি ও পাহাড়তলীতে (সিসিএস ও কারখানা) টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে দুই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। তারা হলেন, নগরীর খুলশী থানার যুবদলের আহ্বায়ক মো. হেলাল হোসেন প্রকাশ পিচ্চি হেলাল ও নগর যুবদলের সদস্য সাখাওয়াত কবির সুমন প্রকাশ ক্যাডি সুমন।
তাদের প্রভাব খাটিয়ে দুই পরিবারে অপর সাত ভাই টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের মারধর ও অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন। অথচ তারাই পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়মিত ব্যবসা করেছেন। দলীয় পরিচিতি থাকলেও তাদের ব্যবসায় প্রভাব পড়েনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে তারা অন্য ব্যবসায়ীদের রেল অফিসে না আসার হুমকি দিচ্ছেন। এতে ব্যবসায়ী ও রেল কর্মকর্তারা আতঙ্কে আছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসায়ী মো. এনায়েত কবির বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেয়ার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোটি কোটি টাকার কাজ করে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। তার বড় ভাই আহসানুল কবির নোমানও ব্যবসা করেছেন আওয়ামী-যুবলীগের সঙ্গে আঁতাত করে।
অপর তিন ভাই নগর যুবদলের সদস্য সাখাওয়াত কবির সুমন প্রকাশ ক্যাডি সুমন, এনামুল নোটন ও জিএম মোর্শেদ সুজনও ব্যবসা করেছে, এখনও করছে। একইভাবে নগরীর খুলশী থানার যুবদলের আহ্বায়ক মো. হেলাল হোসেন প্রকাশ পিচ্ছি হেলালসহ অপর তিন ভাই মোক্তার হোসাইন, মাসুদ হোসাইন ও মোহাম্মদ শাহিন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যবসা করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, তারাই এখন সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্কের নাম। টেন্ডার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিতে তারা এখন বেপরোয়া। গত ৫ আগস্টের পর থেকে একাধিক ব্যবসায়ীকে মারধর ও রেলের অফিসে না যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। বিভিন্ন কাজে রেল অফিসে গেলে অনেক ব্যবসায়ীকে মারধর করে তারা বের করে দিয়েছেন। তাদের মতামতের বাইরে কাউকে কাজ না নিতে রেল কর্মকর্তাদেরও হুশিয়ার করছেন। দুই পরিবারের ৯ ভাইয়ের হুমকি-ধমকিতে সাধারণ ব্যবসায়ী ও রেল কর্মকর্তারা আতঙ্কগ্রস্ত। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন তারা।
জানা গেছে, রেলওয়ে অফিস ও আশাপাশের এলাকায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদা ও দখলবাজিতে জড়িতরা খুলশী থানা যুবদলের আহ্বায়ক হেলাল হোসেন ও ক্যাডি সুমনের অনুসারী। হেলালের অনুসারী ছাত্রদল কর্মী আলী হায়দার রেলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল বিভাগের (ডিএইন-২, ডিএইন-১) অফিসে গিয়ে চাঁদাবাজি এবং ব্যবসায়ীদের হুমকি ও মারধর করেন। বিধান, রাহাত, করিম, মোহাম্মদ জাফরসহ একাধিক ব্যবসায়ীকে হেনস্থার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় ও ব্যবসায়ীরা জানান, নগরীর ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিব ও তার ক্যাডার যুবদল কর্মী মাসুদ একাধিক দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রায় প্রতিদিন দখল-চাঁদাবাজি করছেন তারা। পাহাড়তলী আমবাগান এলাকায় আবু কালাম, করিম মাস্টার, বোম বাবু, রাব্বি, মিন্টু, জাহিদ, শাহিন, আলমগীরও হামলা-ভাঙচুর ও দখল-চাঁদাবাজি করছে। রেলের পরিত্যক্ত বাসা, রিকশার গ্যারেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল লুট করছে। তারা সবাই হেলালের অনুসারী।
এ ছাড়া নগর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজালাল পলাশ প্রকাশ কানকাটা পলাশ, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক টুটুলসহ আরও কয়েকজন নেতা রেলের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে মরিয়া। তারাও হেলালের অনুসারী।
অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদল নেতা হেলাল বলেন, আমাকে কী কেউ রেল অঙ্গনে দেখেছে? ৫ আগস্টের পর তো কোনো টেন্ডার হয়নি। ব্যবসায়ীদের হুমকির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল শামসুল হক রানা প্রকাশ বাইট্টা রানা। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি করলেও বর্তমানে চাকরি ছেড়ে পুনরায় চাঁদাবাজি-দখলবাজি করছেন। রানার দাবি, চাকরি ছেড়ে এখন ব্যবসা ও সামাজিক কাজে ব্যস্ত। রাজনীতি করলেও দখল-চাঁদাবাজিতে জড়িত নন।
রেলের প্রকৌশল বিভাগে ব্যবসায়ী ও পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহম্মদ বলেন, তারা আমাকে ছয় মাস রেল অঙ্গনে যেতে নিষেধ করেছে। একইভাবে অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও এমন আচরণ করছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে এনায়েত কবির আমাদের সময়কে বলেন, ব্যবসায়িক পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছি। তবে যে কয়েকজন ব্যবসায়ীর কথা এসেছ তাদেরকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এখানে তেমন কিছুই হয়নি। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন যুবদলের সদস্য সাখাওয়াত কবির সুমন। সূত্র : আমাদের সময়।