
ঢাকা : গুমের শিকার হবার পর, এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৩৩০। তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান অসরপ্রাপ্ত বিচারক মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি জানান, এই ৩৩০ জনের ভেতর কেউ ভারতের কারাগারে কিংবা অন্য কোথাও আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, বগুড়া পুলিশ লাইনে গোপন বন্দিশালার খোঁজ মিলেছে বলেও জানিয়েছে এই কমিশন।
গুমের সাথে জড়িত কিছু ব্যক্তির জন্য, পুরো বাহিনীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহবান জানিয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) সকালে সংবাদ সম্মেলনে কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সরকারের প্রতিটি বাহিনীর সদস্যরাই কম-বেশি গুমের সাথে জড়িত ছিলো। তবে শাস্তি শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হবে।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ভারত থেকে পুশইন করা ব্যক্তিদের তথ্য চাওয়া হলে ১৪০ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। তবে, এ তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তির নাম এখনো পাওয়া যায়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই-আড়াই বছরে ভারতের কারাগারে ১ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশি বন্দী আছেন।
কমিশন জানায়, ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক ১ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশির তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। গুমের শিকার কেউ সেখানে আছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিশন জানায়, এখন পর্যন্ত ১৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্য হতে প্রায় এক হাজারটি অভিযোগের যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮০ জন অভিযোগকারী এবং ৪৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা জানতে অনুসন্ধান চলছে।
কমিশনের প্রধান জানান, প্রতিটি গুমের ঘটনা সরকারের ওপরের নির্দেশে করা হয়েছে। ওপর বলতে তখনকার প্রধানমন্ত্রীই হবেন। প্রতিটি বাহিনীরই কিছু সদস্য গুমের ঘটনায় জড়িত। তবে পুরো বাহিনীকে আতঙ্কগ্রস্ত হবার কারণ নেই। বলেন, গুমের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায় পুরো বাহিনীর উপর পরবে না।
বিচারপতি মইনুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যারা গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়। এতে কমিউনিটিকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই। গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক স্ট্রিকেন হয়ে যাচ্ছে।
গুম কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, পুলিশ লাইনের ভেতরে কারাগারের মতো গোপন বন্দিশালা তৈরি করে রাখা হয়েছিলো। যেটি একেবারেই এবসার্ট একটা ব্যাপার। সেটি আমরা বগুড়ায় পেয়েছি। আমাদের ধারণা অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের বন্দিশালা আরও পাব।
এসব বন্দিশালা গত ১৫ বছরে করা হয়েছে কি না— জানতে চাইলে নূর খান বলেন, এগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যেই বানানো হয়েছে। সম্ভবত গত ১০-১২ বছরের মতো। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে বন্দিদের এনে রাখা হতো, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো এবং এখান থেকেও অনেকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।
বর্তমানে বিভিন্ন পদে থাকা অনেকেই গুমের সাথে জড়িত অভিযুক্তদের পক্ষে থাকার চেষ্টা করে নিজেরাও ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পরছে, যা না করার আহবান জানিয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।