
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মামলায় ট্রাইব্যুনালে প্রথম বিচার শুরু হলো।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সে সময়ের কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ অভিযোগে আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আট অভিযুক্তরা হলেন- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম ও মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
তাদের মধ্যে মো. আরশাদ হোসেন, মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক। রোববার (২৫ মে) ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই অভিযোগ গঠন করা হয়। গত ২১ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন প্রসিকিউশন শাখায় জমা পড়ে।
৯০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে দালিলিক তথ্য-প্রমাণও সংযুক্ত করা হয়েছে, আছে ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দিও। ১৯টি ভিডিও ক্লিপ রয়েছে ঘটনার। ১১টি পত্রিকার রিপোর্ট রয়েছে। দুটি অডিও কল রয়েছে।
এই মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলি চালায়। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা এই অভিযানে সরাসরি অংশ নেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলন দমন করতে ব্যবহার করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র, এপিসি কার, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও বিপুল পরিমাণ বুলেট।
পুলিশের এই অভিযানে নিহত হন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পলাতক আসামি হাবিবুর রহমানসহ অন্য অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং অধীনস্তদের গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তাদের সহযোগিতা ও নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংস হয়ে উঠে। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের।
সরকারি হিসাবে এই আন্দোলনে আট শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং সেই ঘটনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট চাঁনখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থী শহীদ আনাসসহ ৬ জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ আছে।
২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলীদের আইনজীবী ছিলেন তাজুল ইসলাম।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তাকে চিফ প্রসিকিউটর বা প্রধান কৌঁসুলি করে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেছে।