
মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর পাল্টা হামলার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের সম্ভাব্য পারমাণবিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে যুক্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর পাল্টা হামলার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।
তেহরান জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে প্রথমে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে, এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য আরব দেশের মার্কিন সামরিক স্থাপনাগুলোতেও হামলা চালানো হতে পারে।
বুধবার (১৮ জুন) নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই পরিকল্পনার কথা জানান। এতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
এই হুমকির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য অবস্থান নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলায় সমর্থন দিতে পারেন।
মধ্যপ্রাচ্যে সমরসজ্জা বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
উল্লেখ্য, ইরানের এই গোপন স্থাপনাগুলো এখনো বড় ধরনের ক্ষতির বাইরে রয়েছে। তেহরান থেকে আরও জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালীতে সামুদ্রিক মাইন স্থাপন করতে পারে ইরান। বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি রপ্তানিপথ হরমুজ প্রণালীতে চলাচল ব্যাহত হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে দ্রুত ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে পারে।
এদিকে, আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা আবারও লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করতে পারে।
এর আগেও হুথিরা ওই অঞ্চলে একাধিক হামলা চালিয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছিল। তেহরানের এই হুমকির প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিবহন বিমানগুলো আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে মধ্যপ্রাচ্য অভিমুখে যাত্রা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এটিকে অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের লজিস্টিক তৎপরতা বাড়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
‘মার্কিন হস্তক্ষেপে অপূরণীয় ক্ষতি হবে’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করলে তা ‘নিঃসন্দেহে এমন ক্ষতি বয়ে আনবে যা আর পূরণ করা যাবে না’। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ইরান কখনও আত্মসমর্পণ করবে না। হুমকির জবাবে ইরান ইতিবাচক সাড়া দেয় না।”
এদিকে আল-জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি ভাবে, তারা ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, তাহলে তারা ভুল করছে। এই হস্তক্ষেপ হবে পুরো অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর রসদ।”
রাশিয়ার সতর্কবার্তা
মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে রাশিয়াও। রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিলে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।”
তিনি জানান, রাশিয়া ইসরায়েল ও ইরান উভয়ের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং এই সংঘাত যাতে আরও বিস্তৃত না হয়, সে বিষয়ে তারা উদ্যোগী।