ঢাকা : কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি ও মর্যাদা অনুযায়ী র্যাঙ্ক ব্যাজ পরার অনুমতি পাওয়াসহ নানা দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তারা সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় তারা মন্ত্রীর কাছে নানা বঞ্চনার কথা তুলে ধরে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতির যোগ্য পরিদর্শকদের এএসপি পদে পদোন্নতির দাবিও জানান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দাবিগুলো পূরণের আবেদন জানান তারা।
ডিএমপির ৫০ থানার ওসি একযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এমন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মূলত ‘বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের’ পক্ষ থেকেই দেখা করতে গেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নানা বঞ্চনায় হতাশা আর অসন্তোষের কথা তুলে ধরেছেন। সংগঠনটি দেশে কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে।
পুলিশের পরিদর্শক মর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদায়ন করা হয়। ১০ বছর পরিদর্শক পদে চাকরির পর তাদের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। পরিদর্শকরা বলছেন, পুলিশ বাহিনীতে প্রায় ৭ হাজার পরিদর্শক রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১ হাজার কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা ১০ বছর থেকে ১৮ বছর ধরে একই পদে চাকরি করছেন। পদোন্নতির সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হওয়ায় হতাশ হচ্ছেন তারা। একই পদে চাকরি করেই অবসরে যেতে হচ্ছে তাদের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া একাধিক পরিদর্শক বলেন, পদোন্নতি না হলে নিয়মমতো তাদের গ্রেড পরিবর্তন করার কথা; কিন্তু সরকারের অন্যান্য পদ ও দপ্তরে সেটা হলেও পুলিশের পরিদর্শকদের ক্ষেত্রে সেটাও হচ্ছে না। পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের এক যুগ পার হতে চলেছে।
কিন্তু এসআইরা এখনও তৃতীয় শ্রেণি ও পরিদর্শকদের দ্বিতীয় শ্রেণির র্যাঙ্ক ব্যাজ ব্যবহার করতে হচ্ছে। যেটি তাদের জন্য মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শকরাও পদোন্নতির পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেও মিলছে না পদোন্নতি। আগের বছরের ফল গ্রহণ না করে পরের বছরগুলোতেও দিতে হচ্ছে ফের পদোন্নতির পরীক্ষা। দীর্ঘ বছরেও এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে থানার কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত মাঠ পুলিশের সদস্যদের মধ্যে। এসব বিষয় অভিভাবক হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন তারা।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডিএমপি সদর দপ্তরে তাদের ক্রাইম কনফারেন্স ছিল। ওই অনুষ্ঠান শেষ করে ডিএমপির ৫০ থানার ওসি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে উপস্থিত থাকা একাধিক ওসি কালবেলাকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করে এএসপি পদে পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন তারা।
আবার কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শকদের পদোন্নতি পরীক্ষা একবার নিয়ে পাস করা সদস্যদের মেধাতালিকা তৈরি করে সেখান থেকে পদোন্নতির দাবি তোলা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধানের দাবি তুলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব বিষয়ে লিখিত দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রী তাদের কথা শুনেন এবং দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।
বৈঠকে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও গুলশান থানার ওসি বিএম ফরমান আলী এবং সাধারণ সম্পাদক ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম ছাড়াও তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান, ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি মুন্সী ছাব্বির আহমেদ ও জানে আলম মুন্সীসহ কয়েকজন বক্তব্য দেন।
গুলশান থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, বহু বছর ধরে চললেও তাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এসআইকে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং পরিদর্শকদের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু তারা এখনো মর্যাদা অনুযায়ী র্যাঙ্ক ব্যাজ পাচ্ছেন না। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও একই পদে ১৭ বছর ধরে তাদের চাকরি করতে হচ্ছে। পদোন্নতি না পেয়ে একই পদে চাকরি করে অবসরে যেতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন।
একজন ওসি কালবেলাকে জানান, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে পদমর্যাদা অনুযায়ী একজন পরিদর্শকের ইউনিফর্মে কাঁধের দুই পাশে দুটি করে পিপস থাকার কথা এবং এসআইদের একটি করে পিপস থাকার কথা; কিন্তু এখনো পরিদর্শকরা একটি করে দুটি পিপস ব্যবহার করছেন আর এসআইরা আগের মতোই দুই পাশে দুটি করে ফুল পড়ছেন। এটি তাদের মর্যাদার বিষয়।
পরিদর্শকরা দাবি করেছেন, পরপর দুবার সুপারনিউমারারি পদ তৈরির মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এতে প্রথম দফায় এএসপি পদ বিলুপ্ত করে এডিশনাল এসপিদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরে আবারও সুপারনিউমারারি পদ তৈরির সময় এএসপির পদ বিলুপ্ত করা হয়। এতে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কাজ করা পরিদর্শক ও উপপরিদর্শকরা।
তাছাড়া বিসিএস পুলিশ ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সঙ্গে তাদেরও ৩৩ ভাগ পদোন্নতি হওয়ার কথা। কিন্তু এএসপি পদ কমিয়ে উপরের দিকে পদ বাড়ানোর ফলে তারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা বলছেন, একই পদে ১০ বছর চাকরির করার পর সরকারের সব দপ্তরের প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্ত হলেও পুলিশের পরিদর্শকরা সে সুযোগ পাচ্ছেন না।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ও পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, এর আগে তারা তাদের দাবি নিয়ে পুলিশ প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, চাকরির ১০ বছর হলে ষষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং সফটওয়্যার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা, ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা, এসআই বা সার্জেন্ট এবং ইন্সপেক্টরের র্যাংক ব্যাজ উন্নীত করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগের মুলতবি সভাটি ফের আহ্বান করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তারা দাবি জানিয়েছেন।