কুড়িগ্রাম : ‘কপাল ভালো টের পাইছি। না হইলে মানুষ সুদ্দোয় নদীত ভাসি গেইলং হয়। কোনো মতে ঘরগুলা সরবার পাছি। কিন্তু এলা কোটাই যায়া কেমন করি বাস করমো সেই কিনারা পাইতেছি না।’ এভাবেই ধরলা নদীর ভাঙনের ভয়াবহতার কথা বলছিলেন দিনমজুর রোস্তম আলী।
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের উলিপুরে হঠাৎ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ধরলা নদী। তীব্র হয়েছে ভাঙন। রবিবার রাতে উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে ৫টি বসতভিটাসহ শতাধিক বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এরপর থেকেই টানা ভাঙন চলছে।
হুমকিতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভূমি আফিসসহ বসতি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উলিপুরে হঠাৎ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ধরলা। হুমকিতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভূমি আফিসসহ বসতি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বলছে, রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ধরলা তীরবর্তী বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের খুদিরকুটি ব্যাপারিপাড়া গ্রামে ধরলার তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এক রাতেই অন্তত একশ বিঘা আবাদি জমি, শত শত গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। এখনও ভাঙন হুমকিতে শতাধিক পরিবার ও স্থাপনা।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা দেওয়ান আলী বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। সামলায় যায় না। কোনটা ধরি কোনটা সরাই। গাছপালা, খড়ের পালা সউক শ্যাষ। খালি ঘরের চালটা করি সরবার পাছি। কাই কারটা সামলায়! এলা যে কোটাই যায়া থাকমো সেটায় কবার পাই না।’ শুধু দেওয়ান আলী নন, তার গ্রামের অনেকের অবস্থা এমন সঙিন ।
রাতের ভাঙনের পর সারাদিনে ভাঙন নিয়ে লোকালয়ের দিকে ধীরে অগ্রসর ছিল ধরলা। এর বাম তীরের নিকটবর্তী বসতভিটা ও স্থাপনা ভাঙন হুমকিতে দাঁড়িয়ে আছে। কথা হয় ভাঙনের শিকার আরেক দিনমজুর সামেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চারটা ঘরের চাল সরে নিয়া স্কুল মাঠত থুচি। ভিটার অর্ধেক গেইছে। যে ধার পড়ছে নগদ বাকিকোনাও যায়! একজনের কাছত ঘর তুলি থাকার জন্য জমি চাছি। না দিলে কোটেই থাকমো সে উপায় নাই। ’
ধরলার ভাঙনে হুমকিতে আছে ওই ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুদির কুটি আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়, তৎসংলগ্ন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ভূমি অফিস ও ৪ নং ওয়ার্ডের আক্কেল মামুদ কমিউনিটি ক্লিনিক।
৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ভাঙন চলছে। গত এক দশ দিনে ওয়ার্ডের স্কুল সংলগ্ন ২৯টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা এখন আরও বাড়ছে। কিন্তু পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমার নিজের বাড়িও ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে অন্তত ১ হাজার মিটার প্রতিরক্ষা কাজ করা প্রয়োজন। তা নাহলে কোনো কিছুই রক্ষা করা যাবে না।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বেগমগঞ্জে ধরলার বাম তীরে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশজুড়ে ভাঙন রয়েছে। এত বড় অংশে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ করার বরাদ্দ নেই। ভাঙনের খবরে আমরা তাৎক্ষণিক ২ হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি। স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্থাপনাগুলো রক্ষায় আমরা জরুরি ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’