যশোর : পেঁয়াজ, রসুন ও আলুর বাজারের লাগাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। দেশে কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজ এবং রসুনের বাজার খানিকটা হলেও এখন আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। তবে ভারত থেকে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না।
যশোরে খুচরা পর্যায়ের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আড়তদারদের দাবি, আমদানিকারক ও সংরক্ষণকারীরা সিন্ডিকেট করে অতি মুনাফার জন্য এ সংকট তৈরি করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে পণ্যটির দাম কমানো সম্ভব।
যশোর বড় বাজারের আড়তদার বাদশা মিয়া বলেন, মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে তারা ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তার দাবি, আমদানিকাররা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে রেখেছে। তাঁর অভিমত, সরকার যদি দাম বেড়ে যাওয়ার গোড়া খুঁজে বের করে, তাহলে নিশ্চয়ই পেঁয়াজের দাম কমানো সম্ভব।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্র থেকে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে চলতি মাসেই ভারত থেকে ২৭৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এসব পেঁয়াজ আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছেÑ খুলনার এস এম কর্পোরেশন, রাজ ট্রেডিং ও ঊষা ট্রেডিং। এর মধ্যে এস এম কর্পোরেশন চলতি মাসেই দুই কনসারমেন্ট, রাজ ট্রেডিং এক কনসারমেন্ট ও ঊষা ট্রেডিং ১ কনসারমেন্ট পেঁয়াজ আমদানি করেছে।
এসব মালামালের ইনভয়েস ভ্যালু দেখানো হয়েছে ১৪০ থেকে ২২০ ইউএস ডলার। সে অনুযায়ী ভারত থেকে এসব পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১৪ টাকা ২৯ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ২৪ টাকা মূল্যে কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে কাস্টমসের অ্যাসেসমেন্ট ধরা হয়েছে ৩৩০ ডলার। কাস্টমসের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালুসহ আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ২৪ টাকা।
এসব মালের অধিকাংশই ক্লিয়ারেন্স করেছে বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শোভা এন্টারপ্রাইজ, রয়েল এন্টারপ্রাইজ, উৎস এন্টারপ্রাইজ ও বাংলাদেশ লজিস্টিক নামের প্রতিষ্ঠান। তবে গতকাল বুধবার ঢাকার আমদানিকারক পিএইচপি বিল্ডার্স ৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে। যার ইনভয়েস মূল্য দেখানো হয়েছে ১৪০ ইউএস ডলার। সে হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য পড়েছে ১৪.২৯ টাকা।
বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শোভা এন্টারপ্রাইজের মালিক নাবিল হোসাইন বলেন, আমদানিকৃত পেঁয়াজের ইনভয়েস মূল্য মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো কাস্টমসের এসেসমেন্ট মূল্য ও ইন্ডিয়ান কাস্টমসের ইনভয়েস মূল্যের ওপর রপ্তানি শুল্ক চাপিয়ে দেওয়া। দুদেশের সরকারি পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে ভারতে রপ্তানি শুল্ক উঠিয়ে নিলে পেঁয়াজের দাম অনেক কমে যাবে।
বেনাপোল এক নম্বর শুল্কায়ন গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বেনাপোল দিয়ে সব সময়েই কাঁচামাল আমদানি কম হয়ে থাকে। ভোমরা ও হিলি বন্দর দিয়ে বেশি কাঁচামাল আমদানি হয়। তবে দেশে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে পেঁয়াজ আসছে। এসব পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য ১৪ টাকা থেকে ২৪ টাকা পর্যন্ত। তিনি বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঊর্ধ্বগতিতে তিনিও বিস্মিত।