ঢাকা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রভাবশালী রাজনীতিক শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন। তারা লিখেছে, সত্তরোর্ধ্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত এক নাম।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত পাট উৎপাদনকারী দেশ থেকে এশিয়া-প্যাসিফিকের দ্রুততম প্রসারণশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় এসব কথা বলা হয়েছে টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত রাষ্ট্রের শাসনভার ছিল তার হাতে। বর্তমানে তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন নারী সরকারপ্রধান। ইসলামী মৌলবাদী শক্তি ও সামরিক হস্তক্ষেপকারী উভয়পক্ষকেই পরাস্ত করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি।
ইতোমধ্যে তিনি মার্গারেট থ্যাচার বা ইন্দিরা গান্ধীর চেয়ে বেশিবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আসছে জানুয়ারির ব্যালট বাক্সের লড়াইয়ে জেতার ব্যাপারেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সেপ্টেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা টাইমকে বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমার জনগণ আমার সঙ্গে আছে।’
বিগত বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯ বার গুপ্তহত্যার চেষ্টা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে টাইম ম্যাগাজিন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সমর্থকরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে; এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার শতাধিক।
পুলিশের যানবাহন এবং বাসেও আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে কয়েকজনের। বিএনপি ২০১৪ এবং ২০১৮ উভয়ক্ষেত্রেই নির্বাচন বয়কট করার কথা জানিয়েছে। তাদের দাবি, শেখ হাসিনা যেন নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
একনজরে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা ও বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে।
রাজনীতির শুরু স্কুলজীবনেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৬২-তে স্কুলের ছাত্রী হয়েও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন দিশেহারা, সেই ক্রান্তিলগ্নে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের অনুরোধে শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে ফিরে এসে দলটির সভাপতির গুরুদায়িত্ব নেন। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর দলের ২২তম ত্রৈবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলে দশম বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
১৯৯১-এর নির্বাচন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করে অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে এরশাদবিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন শেখ হাসিনা। পরে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। এরপর দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পায় এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯৬ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদ, ১৯৯৬-২০০১ ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৬ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। এতে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
বিরোধীদলীয় নেতা, ২০০১-২০০৮ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের কাছে হারে আওয়ামী লীগ। এ সময় তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদকাল, ২০০৯-২০১৪ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়ী হয়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদকাল (২০১৪-২০১৯) ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চতুর্থ মেয়াদকাল (২০১৯-বর্তমান)
একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসনে জয়ী হলে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি তার টানা তৃতীয় মেয়াদ।
হত্যাচেষ্টা শেখ হাসিনাকে অন্তত ২০ বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। প্রতিটিতেই কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে গেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানের কাছে, ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেলস্টেশনে, ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর রাসেল স্কয়ারে, ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে, ২০০০ সালে এক জনসভাস্থল ও হ্যালিপ্যাডে, ২০০১ সালের ২৯ মে খুলনায়, একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে, ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয়, ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালে এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়।
গ্রেপ্তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হন ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই বছরের ১৬ জুলাই তাকে নিজ বাসভবন ‘সুধা সদন’ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অর্জন অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জিডিপির হার, মাথাপিছু আয়, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সমুদ্রসীমার জয়, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎ, মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ১০ মেগা প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাপক অথনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি হয় ।