ময়মনসিংহ সংবাদদাতা : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুস লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত অফিস সহায়ককে শোকজ করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুস লেনদেনের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অফিস সহায়ক আহাম্মদ ১৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এসময় তিনি বলছেন, ‘টাকা হইছে হাতের ময়লা। আপনিতো মাত্র ১৫ হাজার দিছেন, আরও তিন হাজার দিবাইন (দিতে হবে)। মন্তু নামের একজনের খারিজ করে দিছি। সে ৪০ হাজার টাকা দিছে।’
এ ঘটনায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন (নায়েব) অপসারণ দাবিতে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সানোয়ার হোসেন কর্মরত আছেন প্রায় ছয় বছর ধরে। ভূমি অফিসের পাশেই তার বাড়ি হওয়ায় অফিস চলাকালীনও তিনি বাড়িতে অবস্থান করেন। ওই অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই সেবাগ্রহীতারা অফিস কার্যালয়ে গিয়েও তার দেখা পান না। যে কারণে ফোনে অথবা সরাসরি নায়েবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তার অফিস সহায়ক আহাম্মদ এবং প্রতিবেশী ভাতিজা হিরকের সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
হিরক ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কোনো কর্মচারী নন। তবে তিনি দিনভর অফিসেই পড়ে থাকেন এবং নায়েবের ঘুসের লেনদেন করেন। হিরক ও অফিস সহায়ক আহাম্মদ মিলে প্রতি খারিজে (নামজারি) ৮-৪০ হাজার টাকা আদায় করেন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।
রাজিবপুর ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল ও মাহফুজ নামের দুই ভুক্তভোগী জানান, সম্প্রতি তারা ২০ শতক জমির খারিজ করতে নায়েব সানোয়ার হোসেনের কাছে যান। পরে নায়েব তাদের অফিস সহায়ক আহাম্মদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। জমি খারিজ করতে আহাম্মদ তাদের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ১৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর তারা আহাম্মদকে প্রথমে ১৫ হাজার ও পরে আরও তিন হাজার টাকা দেন।
টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে অফিস সহায়ক আহাম্মদ বলেন, ‘আমি ওই টাকা ধার হিসেবে নিয়েছি। পরে ফেরত দিয়ে দেবো। খারিজের জন্য আমি কোনো টাকা-পয়সা নিইনি।’
নায়েবের ভাতিজা হিরক বলেন, ‘নায়েব আমার প্রতিবেশী চাচা হন। ওই সুবাদে আমি অফিসের কাজকাম করে দিই। কিন্তু কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন আমি করি না। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
রাজিবপুর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভিডিওটা দেখে আমি তার (আহম্মদ) কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, এক লোক খাজনার চেক কাটতে বিকাশে টাকা দিতে পারছিল না। তাই সে অফিসে এসে হাতে দিয়ে গেছে। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে সবগুলোই মিথ্যা ও বানোয়াট।’
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘টাকা নেওয়ার ভিডিওটি দেখে অফিস সহায়ককে তাৎক্ষণিকভাবে শোকজ করা হয়েছে। নায়েবের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তকে আসার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্তে নায়েব দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাফিজা জেসমিন বলেন, বিষয়টি নজরে এসেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এটি জানানো হবে।