রাজিব রায়হান: মানুষের জীবন বিকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে শৈশব ও কৈশোরকাল। কিন্তু ইট পাথরের নগরী ঢাকায় বিকাশের সময় তো দুরের কথা হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সময়ই নাই। গতকাল ঢাকার অদূরে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রজাপতি মেলায় এসেছে শিশুরা জানালেন সেই আকুতি যেন প্রজাপতির মতো ডানা মেলে বাঁচার।
ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে মেলায় আগত শিশু ও তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
ঢাকার নীলক্ষেত থেকে আগত রাফিয়া বিনতে রফিক সেই ছোট্ট শিশু যারা প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়তে চাই। রাফিয়ার সাথে এসেছে তার বাবা চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম তিনি একটি এনজিওতে চাকরি করছেন। ছুটির দিন থাকায় অন্যান্য দিন শিশুদের নিয়ে বের হতে পারে না তিনি।
ছুটির দিন থাকায় পত্রপত্রিকায় খবর দেখে ছুটে এসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। মেলায় এসে বাবা-মেয়ে দুজনই খুশি। নয় বছরের রাফিয়া জানায় সে এবার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। মা-বাবা দুজনই ব্যস্ত থাকায় তাকে নিয়ে তারা কোথাও বের হয় না। রংবেরঙের জীবন্ত প্রজাপতি দেখে অনেক ভালো লাগছে তার। ছুটির দিনে প্রজাপতির মত ডানা মেলে ছোটাছুটির ইচ্ছে তার।
এদিকে তার বাবা বলেন, ” আমার সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন সেটি ঢাকায় নেই। জাহাঙ্গীরনগর এমনিতেই প্রকৃতি ঘেরা পাশাপাশি আজকে ছুটির দিন হাওয়ায় স্ত্রী সন্তান সহ চলে এসেছি প্রজাপতি মেলায়।
অন্যদিন ইচ্ছা থাকলেও ছুটি না থাকায় এভাবে আসা সম্ভব হয় না। আর ঘোরাঘুরির জন্য ভালো জায়গা মধ্যবিত্তদের জন্য তো নাই-ই।”
‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত ১৩তম এ প্রজাপতি মেলায় এসেছেন শত শত মানুষ। কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউবা একাই।
এল আগে গতকাল শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে বেলুন উড়িয়ে ‘প্রজাপতি মেলা-২০২৩’ এর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলম।
এসময় উপাচার্য মো. নূরুল আলম বলেন, “প্রজাপতি সংরক্ষণে এবং সচেতনতাই এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা দুইটি মাষ্টার প্লান করছি। শিক্ষা কার্যক্রম প্রবৃদ্ধির জন্য একাডেমিক মাস্টারপ্লান ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার নিমিত্তে বায়োডাইভার্সিটি মাস্টারপ্লান।”
এসময় তিনি আরো বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ আকর্ষণ প্রজাপতি মেলা এবং পাখি মেলা যেটা উপভোগ করতে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে থাকেন।
আমরা ‘পাখি মেলা-২০২৩’ জানুয়ারি মাসের করার পরিকল্পনা করছি। দর্শনার্থী, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার অংশগ্রহনকারী, প্রজাপতি বিশেষজ্ঞসহ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সবাইকে তিনি প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।”
এ আয়োজন নিয়ে মেলার আয়োজক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা যেমন প্রজাপতি ও প্রকৃতি সংরক্ষণে সচেতন করার জন্য এই মেলার আয়োজন করেছি তেমনি শিশুদের বিকাশও আমাদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা চাই শিশুরাও বিকশিত হোক এবং পরিবেশ ও রক্ষা পাক।”