
রাজিবুল হক সিদ্দিকী, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের একমাত্র অবলম্বন শিমুল গাছ। বিগত এক- দেড় যুগ আগেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে কানাচে আর রাস্তার ঢালে প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত।
বিশেষ করে মাঘ ফাল্গুন মাসে শিমুল গাছে লাল কিংবা গোলাপী রংয়ের নয়নাভিরাম ফুলই জানান দিত কোন এলাকায় শিমুল কত গাছ আছে। প্রতিটি গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিত বসন্ত এসেছে দ্বারে। কিন্তু সেই বৃহৎ গাছের দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কালের আবর্তনে হারিয়ে
যাচ্ছে গ্রাম বাংলা থেকে শিমুল গাছ। গ্রাম বাংলার অপরূপ শোভা বর্ধনে রক্তলাল শিমুলে তুলনা করা যায় না অন্য ফুলের সমীকরণে। প্রাকৃতিকভাবে তুলা উৎপাদনের এই গাছটিকে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত হলেও মান্দার গাছ বলে সর্বাধিক খ্যাত।
প্রবাদে শোনা যায়- মান্দার গাছ শত বছরের হলেও নাকি সাড়ি হয় না। যদিও কথাটি বয়স্ক লোকের কম বুদ্ধির কর্মকান্ডের অদক্ষতার কারণ হিসাবে একটি উদাহরণ প্রতীক হয়ে বলা থাকে। এই গাছের ফুল ও ফল নিয়ে
সাহিত্য-কাব্য রচিত হয়েছে। এর শিকড় বাকল ওষুধ হিসেবে প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে শিমুলের কাঠ বা তক্তা দিয়ে বিল্ডিংয়ের ছাদে সাটারিং দেওয়ার কাজ করা হচ্ছে। আর হার্ডবোর্ড তৈরির মূল কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই শিমুল গাছ। কিন্তু দিনদিন এই গাছটি হারিয়ে গেলেও সরকারি ভাবে এর রোপনের জন্য কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছেনা।
এক সময় বসত বাড়ি ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে প্রচুর শিমুল গাছ চোখে পড়তো, কাঁটাযুক্ত বিশাল বিশাল গাছের ছায়ায় পথিক বিশ্রাম নিত। আবার এই গাছের তলায় এক সময় গ্রাম্য খেলাধুলা বা মেলার আয়োজনও করা হতো।
এসব বিলুপ্ত। শিমুল গাছ প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে উঠে। পরিত্যক্ত ভূমিতে অনাদরে বেড়ে উঠা শিমুল গাছে ২/৩ বছরের মধ্যেই ফুল ও ফল ধরে। কিন্তু কেউই শিমুল গাছ বাণিজ্যিক ভাবে রোপন করে না।
এতে এক দিকে মানুষ তাদের শীতবস্ত্র হিসাবে লেপ, তোষক আর বালিশ তৈরির প্রধান উপকরণ মানসম্মত তুলার চাহিদা হারাবে। তুলার জন্য গার্মেন্টের ঝুট তুলার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে সবাই। অপর দিকে শিমুল গাছ বিলুপ্তির জন্য প্রকৃতিও হারাচ্ছে তার ভারসাম্য। এই গাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার।