
বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। বেঁচে থাকতে আমাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন যা আমরা বৃক্ষ থেকে পাই। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষের বছরে যতটুকু অক্সিজেন প্রয়োজন তা ৭/৮ বছরের পূর্ণবয়স্ক গাছ বাতাসে ছাড়তে পারে। খাদ্য ও পুষ্টি, আসবাবপত্র তৈরির কাঠ, জ্বালানি ইত্যাদির উৎস বৃক্ষ। দেশের অনেক মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বৃক্ষের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশকে ঠান্ডা রেখে তীব্র গরমের হাত থেকে বাঁচতে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। অতি ও অনাবৃষ্টি, খরা, ঝড়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। ষড় ঋতুর দেশ হলেও গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত বাদে অন্য ঋতুগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। ছোট বেলায় আমরা দেখেছি বর্ষার মৌসুমে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হতো। এমনকি কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতে নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর থাকতো। কিন্তু এখন সবই স্মৃতি।
বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসবের মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের জনজীবন, ফসল, রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ লাইন ইত্যাদি ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সিডর, আইলাসহ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়, আকস্মিক বন্যা ইত্যাদি আমাদের এমন অভিজ্ঞতার সঞ্চার করেছে।
বর্তমান সময়ের কথা উল্লেখ করলে বলতে হবে, দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে, চুয়াডাঙ্গাতে প্রায় প্রতিদিন বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। গ্রামের তুলনায় শহরে গরমের পরিমাণ বেশি অনুভব হয়। তাই এখন, অতি তাপমাত্রা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় বেশ কিছু বিষয়ের সাথে বৃক্ষ রোপণ বৃদ্ধি ও বৃক্ষ কর্তন রোধ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে সর্বমহলে।
কারণ, দেশের মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফরেস্ট–২০২২’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন বলছে, দেশে এখন মোট ভূমির ১৪.১ শতাংশ বনভূমি। তবে অনেকের ধারণা বনভূমির পরিমাণ আরও কম। শহর অঞ্চলে গাছপালা কেটে এবং জলাশয় ভরাট করে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। এতে, গরমের তীব্রতা বাড়ছে। জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন যেসব কারণে হচ্ছে তার মধ্যে একটি বনভূমি উজাড়। গাছপালা বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড কমাতে এবং বৃষ্টিপাত ঘটতে সহায়তা করে। কিন্তু সারা দেশে গাছপালা নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। বনাঞ্চল আমাদের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষা করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, খুলনা অঞ্চলের সুন্দরবন বিভিন্ন দুর্যোগে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও মাটি, শব্দ ও বায়ু দূষণ রোধে বৃক্ষের ভূমিকা রয়েছে। তবে, আমাদের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যবস্থা পৃথিবীকে বসবাসের অনুপযোগী করছে দিনে দিনে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংঘটিত দুর্যোগ মোকাবিলা ও পরিবেশের ভারসাম্যতা রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে।
সাধারণত বর্ষার মৌসুমে বৃক্ষ রোপণ করা হয়। কিছু দিন পরেই দেশে বর্ষার মৌসুম শুরু হবে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। রাস্তার ধার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়ির পাশে, পতিত জমি, রেললাইনের পাশে, হাট বাজারে ঔষধি, ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।
লেখক: সামিয়া চাঁদ, শিক্ষক, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা এবং মো. শাহিন রেজা, সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।