মহাকাশে দিনের পর দিন কাটিয়েছে মানুষ। কিন্তু অতল সমুদ্রের নিচে সম্পূর্ণ একা থাকা মোটেও কিন্তু সহজ বিষয় নয়! এবার সমুদ্রের নিচে ৯৩ দিন সময় কাটিয়েছেন এক ব্যক্তি। একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার জন্য তিনি তিন মাসের বেশি সময় পানির নিচে থেকেছেন। বিজ্ঞানীরা দেখতে চেয়েছিলেন চাপযুক্ত পরিবেশে পানির নিচে বসবাসের ফলে মানুষের দেহে কি প্রভাব পড়ে।
এতেই উঠে এসেছে চমকপ্রদ কিছু তথ্য। ৯৩ দিন আটলান্টিক মহাসাগরের নিচে কটিয়েছেন ৫৬ বছর বয়সি জোসেফ দিতুরী। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত নৌ ককর্মকর্তা। ইতিমধ্যে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দিন পানির নিচে থাকার রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন তিনি। পৃথিবীতে যত মহাসাগর আছে তার তলদেশে ৮০ শতাংশ জায়গায় এখনো মানুষ পৌঁছাতেই পারেনি। এমন কি কোন যন্ত্রও পাঠানো সম্ভব হয়নি।
মানুষ চাঁদে পৌঁছে গেছে, মঙ্গলে রোবট পাঠিয়েছে কিন্তু আমাদের নিজেদের গ্রহে থাকা সমুদ্রের তলদেশ সম্পর্কে ৮০ শতাংশই আজানা। দিতুরি প্রথমে পানির চাপ এবং শতভাগ বিশুদ্ধ অক্সিজেন ছাড়া একটি হাইপের বাড়ির চেম্বারে থেকেছেন। এই পরীক্ষা চালানোর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এবার মহাসাগরের নিচে থাকবেন। সেই অনুযায়ী শুরু হয় প্রস্তুতি। দিতুরি তার দলবল নিয়ে তৈরি করে ফেলেন একটা আন্ডার ওয়াটার পল। এই আন্ডার ওয়াটার পলের মধ্যে গড়ে তোলা হয় হাই ফেভারেট চেম্বার। সমস্ত কাজ গুছিয়ে নিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আটলান্টিক মহাসাগরের উদ্দেশ্যে একাই পাড়ি দেন দিতুরি।
তবে তার শারীরিক অবস্থা মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষজ্ঞরা নিযুক্ত ছিলেন সব সময়। প্রায় ৩ মাস পানির নিচে থেকে ফিরে আসার পর দিতুরির শরীরে ঘটে আশ্চর্য জনক ঘটনা। তার শরীরের কোলেস্টরেলের মাত্রা ৭২ পয়েন্ট কমে যায় এবং প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, দিতুরির টেলোমেরেস তিন মাস আগের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। টেলোমেরেস হল উঘঅ এর আবরণ, যা ক্রোমোজোমের প্রান্তে পাওয়া যায় এবং যার দৈর্ঘ্য বয়সের সঙ্গে কমে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন- দিতুরির শরীরে উল্লেখযোগ্য এসব পরিবর্তন ঘটায় তার বয়স প্রায় ১০ বছর কমে গেছে।