
ঢাকা : সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। গত ১০ এপ্রিল এ রেড নোটিশ জারি করা হয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিষয়টি সামনে এসেছে। বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ছাড়াও পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির বিষয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশটি এখনো ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। তিনি কোন দেশে আছেন তা জানা যায়নি। তার অবস্থান শনাক্ত করার পর সেটি ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। রেড নোটিশ জারির বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশকে ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি জানান, এছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরো ১১ জনের বিরুদ্ধে তিন দফায় ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। চিঠিপত্র আদান-প্রদান ছাড়াও একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও রেড নোটিশ জারির বিষয়টি পর্যালোচনা করছে ইন্টারপোল।
আদালতের নির্দেশনায় প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে থাকে।
ডিআইজি পদ মর্যাদার ঐ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি বা অপরাধের অভিযোগের কারণে দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে গত ১০ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল।
তিনি বলেন, বেনজীর সপরিবারে পলাতক, কোন দেশে আছেন তা এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। রেড নোটিশ যেহেতু জারি হয়েছে, আশা করি খুব শিগগিরই তার অবস্থান ও গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
জুলাই আন্দোলনে দেশ থেকে পালানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিন ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।
ইন্টারপোল যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন পর্যালোচনা করছে, তারা হলেন-
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক,
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
উল্লেখ্য, ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। অনুসন্ধান চলাকালে গত বছরের ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন তিনি।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্ব পালন করা বেনজীর ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগের তদন্ত চলছে।
ডেইলি ঢাকা প্রেস / ২২ এপ্রিল ২০২৫/ জেডআরসি