
ঢাকা : রাজধানীর শাহবাগ মোড় আবার অবরুদ্ধ—ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এবার গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে অবস্থান নিয়েছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, নার্সিং ডিপ্লোমাকে ডিগ্রি সমমানে উন্নীত করতে হবে।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এর ফলে এই মোড় দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার এই অবরোধ আশপাশের সড়কগুলোতেও ব্যাপক যানজট সৃষ্টি করেছে।
এর আগে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে তারা শাহবাগ মোড়ের দিকে অগ্রসর হন।
শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেই বাধা সরিয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন।
অবরোধের ফলে শাহবাগ ও আশেপাশের এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। অনেক যাত্রীকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লং মার্চের কারণে শাহবাগের বিকল্প সড়কেও যান চলাচল বন্ধ। এ কারণে ভোগান্তি আরও বেশি হচ্ছে।
সাধারণত শাহবাগে বিঘ্ন ঘটলে ফার্মগেট থেকে গুলিস্তানগামী যানবাহনগুলো কাকরাইল ও মৎস্য ভবনের পথ ব্যবহার করে। তবে বুধবার (১৪ মে) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের দিকে ‘মার্চ’ কর্মসূচি ঘোষণা করায় সেই পথেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তির মাত্রা এবার আরও বেড়েছে।
কারওয়ান বাজার থেকে ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছিলেন সুমন চৌধুরী। তিনি বলেন, “দুই দিন পর পর আন্দোলন। আন্দোলন করবেন ভালো কথা শাহবাগ মোড়ে কেন? এখানে আশেপাশে অনেক হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই যে রোগী দেখতে খাবার নিয়ে হেঁটে হেঁটে যাওয়া লাগছে?”
“এভাবে আর কতদিন?” বলে একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে চলে যান তিনি।
শাহবাগ ফুলের দোকানের পাশে মোটরসাইকেলে দাঁড়িয়ে থাকা তৌফিক আহমেদ বলেন, “আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। যেতে দিচ্ছে না। কিছু বলাও যাবে না। বললেই বিপদ।“
মিরাজের মতো অনেক বাইকারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া বাসগুলোতে থাকা যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে গন্তব্যের উদ্দশে হাঁটতে শুরু করেন।
আন্দোলনকারীরা কী বলছেন?
এই আন্দোলনে ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলার নার্সিং শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের বলেন, “আমরা এর আগে বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়েছি। আমাদের দাবি যৌক্তিক, কিন্তু মানা হচ্ছে না। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা অবরোধ চালিয়ে যাব।”
শাহবাগ মোড়ে নার্সিং শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে এই পথে চলাচলকারী গাড়িগুলো আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, “শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছে। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনা করে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনছে না। তারা দাবি আদায় না করে শাহবাগ মোড় ছাড়বে না বলে জানিয়েছে।”
নয় মাস ধরে বারবার অবরোধের কবলে শাহবাগ
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বহুবার শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। প্রতিবারই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট ও ভোগান্তি। কখনো কখনো এসব অবরোধ একাধিক দিন স্থায়ী হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গত ১৩ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন, কাকরাইল মোড়, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, মিন্টো রোডের পাশাপাশি শাহবাগ মোড়েও জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করে।
তবে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের নিষিদ্ধকরণের দাবিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি)-এর ডাকে ৮ মে যমুনার সামনে এবং পরে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে ১০ মে ডিএমপির পক্ষ থেকে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, যেখানে শাহবাগের নাম ছিল না। ফলে বর্তমানে শাহবাগ মোড়ে জমায়েতে পুলিশের কোনো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর নেই।