গাজাবাসীকে অবরুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট সোমবার সোমবার (৯ অক্টোবর) নিজেদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে এক বৈঠকে এ ঘোষণা দেন।
আইডিএফের দক্ষিণ কমান্ডে সোমবার (৯ অক্টোবর) উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে গ্যালান্ট বলেন, আমরা গাজাকে সম্পূর্ণ অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইসরায়েল থেকে গাজায় কোনো বিদ্যুৎ যাবে না। কোনো খাবার যাবে না। কোনো গ্যাস যাবে না। সব বন্ধ থাকবে।
হামাসের শনিবারের (৭ অক্টোবর) হামলার পর থেকেই মূলত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছে ইসরায়েল। ফলে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির প্রায় ৮০ শতাংশ বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েল হয়ে গাজায় প্রতিদিন জাতিসংঘ ও বিদেশি খাদ্য সহায়তা প্রবেশ করে। তাছাড়া ইসরায়েলের করিডোর ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক ইসরায়েলি প্রতিদিন ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অংশে কাজ করতে বা অফিসে যায়। এখন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য তা বন্ধ হয়ে গেল।
সর্বাত্মক হামলা শুরু
গাজায় ইতোমধ্যে বড় ধরনের হামলা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি। গাজার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ইসরায়েলের ভেতরে অনুপ্রবেশকারী হামাসের যোদ্ধাদের পরাজিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার (০৯ অক্টোবর) হাগারি বলেন, আমরা গাজায় একটি বড় হামলা শুরু করেছি। আমাদের সবকটি শহর ও গ্রাম পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখনো কিছু হামাস যোদ্ধা ইসরায়েলে লুকিয়ে থাকতে পারে।
হাগারি যখন এই ঘোষণা দেন তখন ইসরায়েল-হামাস পাল্টাপাল্টি হামলায় পর্যন্ত উভয় পক্ষের নিহত ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ইসরায়েলের ৭০০। ফিলিস্তিনিরে ৫০০ এর বেশি। উভয় পক্ষে আহত হয়েছে আরও কয়েক হাজার। গাজায় ইতোমধ্যে স্থানচ্যুত হয়েছে প্রায় ১ লাখ মানুষ।
টানা বোমা বর্ষণ
সোমবার সকাল থেকে গাজায় ইসরায়েলের বোমা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আইডিএফের দাবি, এখন পর্যন্ত হামাসের ৫০০ লক্ষ্যবস্তুতে ১ হাজার বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
হামলা চালানো হচ্ছে বেসামরিক স্থানে। সোমবার গাজার জাবালিয়া ও আল-সাথি নামের দুটি শরণার্থী শিবিরেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলে। হামলা চালানো হয়েছে মসজিদে।
জরুরি সরকার গঠন
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদলীয় জরুরি সরকার গঠন করছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকার ইতোমধ্যে দেশটির প্রধান পার্টিগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। সোমবার সন্ধ্যায় কয়েকটির পার্টির শীর্ষ নেতারা নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করবেন। তখন সর্বদলীয় জরুরি সরকারের ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১ লাখ সৈন্য সমাবেশ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সীমান্ত এলাকায় ১ লাখ সেনা সমাবেশ করেছে ইসরায়েল। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় যেকোনো সময় বড় ধরনের স্থল আগ্রসন তথা ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে অভিযান শুরু করতে পারে ইসরায়েল।
এমনটি হলে ১৪১ বর্গমাইলের গাজা ধুলোয় মিশে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে হামলার আগে বেশকিছু সমীকরণ ইসরায়েলকে ভাবাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রণতরি
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ঠিক এই সময়ে রবিবার (৮ অক্টোবর) ইসরায়েল উপকূলে একটি যুদ্ধবিমানবাহী রণতরি, একাধিক যুদ্ধজাহাজ ও ফাইটার জেট পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন রবিবার এ ঘোষণা দিয়েছেন। ওয়াশিংটনের এ ঘোষণাকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বলে মন্তব্য করেছে হামাস।
রবিবার অস্টিন ঘোষণা দেন, ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দিকে যাত্রার নির্দেশ দিয়েছি আমি। তা ছাড়া আমরা ইসরায়েলের জন্য অন্য সামরিক সহায়তাও বাড়াব।
একই দিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইসরায়েলের জন্য অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা পাঠানো শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস একই দিন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। সর্বাত্মকভাবে ইসরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। সূত্র : আল-মনিটর, আল-জাজিরা, বিবিসি