এইচ এম রাফি : বাংলাদেশের সমাজে একজন ট্রান্সজেন্ডারের আকাঙ্খা পূরণ করে নিজের সত্ত্বাকে প্রকাশ করার যুদ্ধটা কঠিনই বলতে হবে। কেউ কেউ সেটা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। ইয়াসিন আহমেদ সকাল তাদেরই একজন। সকাল মডেলিং করেন। পাশাপাশি তিনি শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন টেকনোলজিতে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ছেন।
তিনি সবসময়েই চেয়েছেন তাঁর ভেতরের নারী সত্ত্বার প্রকাশ। কিন্তু সেটা একটা সময় পর্যন্ত বলতেই হবে সম্ভব হয়নি। সমাজের অন্যদের বোঝানো যতটা কঠিন নিজের পরিবারের সদস্যের বোকানো কম কঠিন নয়। তা সত্ত্বেও দুরূহ এক জার্নি তিনি পার করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্যই আজকে আমরা এক নতুন সকালকে দেখতে পাচ্ছি।
এক্ষেত্রে কাজ করেছে সকালের অদমনীয় মনোভাব, সাহস আর ইচ্ছা। এ বছর অনুষ্ঠিত মিস এভারগ্রিন বাংলাদেশ ২০২৩-এ তিনি দ্বিতীয় রানার আপ। এই প্রতিযোগিতা থেকে তাঁর অর্জন আর অভিজ্ঞতা উল্লেখযোগ্য। সেখানেই তাঁকে চোখে পড়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ আফরোজার পারভীনের। তিনিই সকালকে নতুন সকালে রূপান্তরের ইচ্ছা পোষণ করেন।
আফরোজা পারভীন বলেন, মিস এভারগ্রিন বাংলাদেশে সকালকে দেখে আমার মনে হয়েছে ওর মধ্যে বোল্ডনেস আছে, বিউটি আছে। আর যে নারী সত্ত্বাকে আমরা দেখতে চাই সেই খাঁটি নারী সত্ত্বা আছে সকালের মধ্যে। অথচ এটা প্রকাশ করা তার জন্য কঠিন। জীবনের যে যুদ্ধ আমরা সবাই করি সেও করে। পাশাপাশি নারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার আলাদা একটা লড়াই ওকে চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
এটাই আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে। এজন্যই আমি চেয়েছি সকালকে নতুন সকালে রূপান্তর করতে। সেই উদ্যোগেরই ফল আমরা আজকে দেখতে পাচ্ছি। আফরোজা পারভীন সকালকে চারভাবে সাজিয়েছেন। চারটি লুক তিনি ক্রিয়েট করেছেন। এটা বলা যেতে পারে সকালের নারীত্বের উদযাপন। এক্ষেত্রে আমার নিরীক্ষা করার ইচ্ছা বেশি কাজ করেছে, বলেছেন, আফরোজ পারভীন।
তবে আমি অবশ্যই মাথায় রেখেছি নারী হয়ে ওঠার পথে সকালের সংগ্রাম ও ঐকান্তিকতা। ফলে সকালকে নতুন রূপে, যথার্থ নারী হিসেবে তুলে ধরার কাজটা অনেকখানি সহজ হয়েছে বলেই তাঁর অভিমত। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি সেভাবেই গভীর অভিনিবেশে সকালকে দিয়েছেন এক নতুন রূপ। সাজানোর পর নিজের চেহারা দেখে অভিভূত সকাল।
বলেছেন, আমি না হাসলেও আমার ঠোঁটগুলো হাসছিল। আমাকে মনে হচ্ছিল একজন রাজকন্যা। তাঁর ভেতরের নারীত্বকে এত সুন্দর করে প্রকাশ করা জন্য আফরোজা পারভীনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সকাল বলছেন তাঁর স্পর্শ আমাকে আমার মায়ের স্পর্শ মনে করিয়ে দিয়েছে। ছবি দেখার পর অভিভূত সকাল বলেছেন, যে সকালের স্বপ্ন তিনি ছোটবেলা থেকে দেখেছেন, সেই সকাল তিনি হয়ে উঠতে পেরেছেন আফরোজা পারভীনের কল্যাণে।
তাঁর ছোঁয়ায় তিনি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন। তাঁকে সাজাতে গিয়ে আমি সবসময়েই মাথায় রেখেছি তাঁর লড়াইয়ের কথা। এমন আরো অনেকেই আছে তাদেরকে আমি সাজাতে পারছি না। কিন্তু সকালকে তো পেরেছি। একে সুন্দর করে তোলা, তার ইচ্ছার বহিপ্রকাশ ঘটানোর মধ্যে দিয়ে তাদের প্রতিও আমি সম্মান জানাতে পারি, বলেছেন আফরোজা পারভীন।
এজন্যই প্রতিটা লুক ক্রিয়েট করার মধ্যে দিয়ে সকালের ভেতরের সত্ত্বাকে বের করে আনার চেষ্টা করেছি। সাজানোর সময় ওর উচ্ছাস আমাকে ছুঁয়ে গেছে। আর সাজানোর পর আমার মনে হয়েছে একটা সুন্দর সকাল কেটেছে।
একজনের মনের জায়গাতে পৌঁছতে পেরেছি। শিল্পী হিসেবে আফরোজা পারভীন মনে করেন, সকালের মতো আরো সকালকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনের তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।