লোহার ফুসফুসে ৭১ বছর বেঁচে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক। তার নাম পল আলেকজান্ডার। চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশ্বে তিনি ‘পোলিও পল’ নামে পরিচিত। এ ছাড়া তাকে ‘আয়রন (লোহা) ফুসফুস পল’ নামে ডাকা হয়। লোহার ফুসফুসের ভেতর বেঁচে থাকা বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি তিনি।
১৯৫২ সালে পোলিও আক্রান্ত হন তিনি। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। পোলিওতে তার ঘাড়ের নিচ থেকে পুরো শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। তখন তাকে বাঁচাতে তার শরীর একটি লোহার ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এটি একটি কৃত্রিম ফুসফুস।
করোনাভাইরাস যেভাবে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়, পোলিওতে তেমন নয়। পোলিওতে মূলত মস্তিষ্কের সঙ্গে দেহের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হয় এবং দেহ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যে কারণে ফুসফুসও কাজ করে না। মাত্র ছয় বছর বয়সে পলের বেলায়ও তাই ঘটেছিল।
সেই থেকে একেকটি বছর কেটেছে তার। কিশোর, তরুণ, যুবক থেকে প্রবীণ হয়েছেন এই যন্ত্রের ফুসফুসের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে।
১৯৫০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়ংকর পোলিওর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই সময় দেশটিতে ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ পোলিও আক্রান্ত হয়, যার বেশিরভাগই ছিল শিশু। পল আলেকজান্ডার তাদেরই একজন।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের ডালাসের বাসিন্দা পল। তার বয়স এখন ৭৭ বছর। এ সময় পৃথিবীতে ঘটে গেছে কত পরিবর্তন। চিকিৎসাবিজ্ঞানেও এসেছে নানা প্রযুক্তি। আধুনিক ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাও উদ্ভাবন হয়েছে। পলকে আধুনিক শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থার আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তিনি তাতে রাজি হননি। তার ভাষ্য, লোহার ফুসফুসের ভেতরে বেঁচে থাকাতেই তিনি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫২ সালের গ্রীষ্মে জুলাই মাসে বাড়ির আঙিনায় খেলার সময় জ্বর আসে পলের। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, সেদিনই তিনি পোলিওতে আক্রান্ত হন। ধীরে ধীরে তার শরীর অবশ হয়ে যায়। আর কখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি।
পোলিওতে আক্রান্ত হওয়ার পর পলের শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। যে কারণে ১৮ মাস কথা বলতে পারেননি তিনি। তবে হাসপাতালে তার মতো আরও শিশু ছিল, যাদের লোহার ফুসফুসের মধ্যে রাখা হয়েছিল। পল তাদের সঙ্গে ইশারা-ইঙ্গিতে যোগাযোগ করতেন। তবে প্রতিদিনই তার সেই সঙ্গীদের কাউকে না কাউকে মরে যেতে দেখেন তিনি। সেই বীভৎস স্মৃতি তাকে তাড়া করে ফেরে আজও।
পল আলেকজান্ডার লোহার ফুসফুসের ভেতর বেঁচে থাকলেও অনেক ইচ্ছা তার পূরণ হয়েছে। অনেকবার বিমানে চড়েছেন। মুখ দিয়ে ছবি এঁকেছেন। এমনকি একটি অবস্থান কর্মসূচিতেও তাকে দেখা গেছে। চোখ মেলে বিশ্বটা দেখেছেন তিনি। আর যে কয়েকদিন বাঁচবেন, এই লোহার ফুসফুসেই বেঁচে থাকতে চান পল। সূত্র : ডেইলি মেইল।