ঢাকা : অবাধ, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত না হওয়ায় দেশে এই মুহূর্তে তপশিল ঘোষণার পরিবেশ নেই বলে মনে করে বিএনপি ও একদফার আন্দোলনে থাকা মিত্ররা।
শর্তহীন সংলাপের পরিবেশ তৈরির জন্য তপশিল ঘোষণার প্রক্রিয়া দুই সপ্তাহ পেছানো এবং শীর্ষ নেতাদের মুক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। তিন দিন আগে দলটির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের পদত্যাগ ছাড়া তারা কোনো সংলাপে যাবে না। শর্তহীন সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে দলটি তাদের আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি সরকারের ওপর আরেকটি চাপ বলে মনে করছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা।
বাংলাদেশে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে শর্তহীন সংলাপে বসতে সোমবার (১৩ নভেম্বর) বড় তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
জানা গেছে, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠিকে বিএনপির তরফ থেকে ইতিবাচক হিসেবেই নেওয়া হয়েছে। সরকারকে দেওয়া দুই প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মনোভাব ও পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। শিগগিরই বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এ বিষয়ে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে জানানো হবে। তবে দলের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে থাকায় তাদের মুক্তি ছাড়া কার সঙ্গে সংলাপ হবে—বিএনপির কাছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপি মনে করে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই দুটি বিষয় মানা হলে সংলাপের পরিবেশ তৈরি হবে। তখন সেই সংলাপে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া, কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে— আলোচনার মাধ্যমে তা নির্ধারিত হতে পারে। যদিও সংলাপ নিয়ে বিএনপির অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়, একই সঙ্গে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো পরিবর্তন হয়নি দলটির।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হলে পরে জানানো হবে।’
তবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, রাজপথে সংঘাত-সহিংসতা এড়িয়ে সংলাপের মাধ্যমে যদি নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা করা যায়, সেটা দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সেই সুযোগ গ্রহণ করতে চায়। তবে অতীতের মতো সংলাপ ফলপ্রসূ না হলে সে ক্ষেত্রে রাজপথে সমাধানের ব্যাপারেও নেতাকর্মীদের অবস্থান থাকবে।
বিএনপি এখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে চার দফায় দেশব্যাপী ৯ দিনের অবরোধ এবং এক দিনের হরতাল পালন করেছে দলটি। আজ বুধবার থেকে পঞ্চম দফায় দেশব্যাপী ফের ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নেমেছে বিএনপি ও মিত্ররা। এমন পরিস্থিতিতে একতরফাভাবে তপশিল ঘোষণা করা হলে রাজপথ আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া তপশিল নাটক করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না। আপনারা (ইসি) তপশিল ঘোষণা করে বাসায় ফিরতে পারবেন না, আমরা জনগণকে নিয়ে রাজপথে প্রতিহত করব।’